নিজস্ব প্রতিবেদক | সোমবার, ২৩ আগস্ট ২০২১ | 415 বার পঠিত | প্রিন্ট
মহামারি করোনাভাইরাসের কারণে চলতি বছরে ঋণ পরিশোধে শিথিলতার পরও বাড়ছে খেলাপি ঋণ বা মন্দ মানের ঋণ। এসব ঝুঁকিপূর্ণ ঋণের বিপরীতে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা সঞ্চিতি (প্রভিশন) সংরক্ষণে ব্যর্থ হয়েছে ১১টি ব্যাংক। বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে প্রয়োজনীয় প্রভিশন রাখতে ব্যর্থ হয়েছে ব্যাংকগুলো। যার মধ্যে ৩ হাজার ৮২৫ কোটি ৩৭ লাখ টাকার প্রভিশন ঘাটতি রয়েছে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ৬ ব্যাংকের। ব্যাংকগুলো হলো- ন্যাশনাল ব্যাংক লিমিটেড, ঢাকা ব্যাংক লিমিটেড, মিউচ্যুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক লিমিটেড, সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড, স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক লিমিটেড এবং রূপালী ব্যাংক লিমিটেড। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
জানা যায়, শেয়ারবাজারের তালিকাভুক্ত ব্যাংকগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্রভিশন ঘাটতি রয়েছে ন্যাশনাল ব্যাংকের। জুন শেষে এ প্রভিশন ঘাটতি দাঁড়িয়েছে দুই হাজার ৩৯৩ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। অন্য ব্যাংকগুলোর মধ্যে- ঢাকা ব্যাংক ২০৯ কোটি ৮০ লাখ টাকা, মিউচুয়াল টাস্ট ব্যাংকের ১৫৯ কোটি ৬২ টাকা, সোস্যাল ইসলামী ব্যাংকের প্রভিশন ঘাটতি ১৫ কোটি টাকা, স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক ১০৩ কোটি ২২ লাখ টাকা এবং রূপালী ব্যাংকের ৯৪৩ কোটি ৯৮ লাখ টাকা ঘাটতি রয়েছে।
শেয়ারবাজারে অতালিকাভুক্ত ব্যাংকগুলোর মধ্যে- বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকের ৪৮২ কোটি ৪০ লাখ টাকা, জনতা ব্যাংকের ঘাটতি দাঁড়িয়েছে পাঁচ হাজার ৩৫১ কোটি ৩৬ লাখ টাকা, বেসিক ব্যাংকের তিন হাজার ৬৭১ কোটি ৭১ লাখ টাকা এবং অগ্রণী ব্যাংকের এক হাজার ৫২৬ কোটি ৯৩ লাখ টাকা প্রভিশন ঘাটতি রয়েছে। আর বিশেষায়িত বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের প্রভিশন ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ২১ কোটি ৬ লাখ টাকা।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিয়ম অনুযায়ী, ব্যাংকের নিয়মিত ঋণের বিপরীতে দশমিক ২৫ থেকে ৫ শতাংশ হারে ব্যাংকগুলোকে প্রভিশন রাখতে হয়। এরমধ্যে এসএমই বিপরীতে দশমিক ২৫ শতাংশ আর ক্রেডিট কার্ডে রাখতে হয় সর্বোচ্চ পাঁচ শতাংশ।
এছাড়া নিম্নমান বা সাব স্ট্যান্ডার্ড ঋণের বিপরীতে ২০ শতাংশ, সন্দেহজনক ঋণের বিপরীতে ৫০ শতাংশ এবং মন্দ বা কুঋণের বিপরীতে ব্যাংকগুলোকে ১০০ শতাংশ প্রভিশন সংরক্ষণ করতে হয়।
জুন শেষে ব্যাংকিং খাতে প্রভিশন সংরক্ষণের প্রয়োজন ছিল ৭০ হাজার ৯৫১ কোটি টাকা। কিন্তু সংরক্ষণ করা হয়েছে ৬৫ হাজার ৩৬৮ কোটি ৬৬ লাখ টাকা। ফলে সার্বিকভাবে নিরাপত্তা সঞ্চিতির ঘাটতি পাঁচ হাজার ৫৮২ কোটি ৭৯ লাখ টাকা।
এদিকে, গত জুন শেষে দেশে বিতরণ করা মোট ১১ লাখ ৩৯ হাজার ৭৭৬ কোটি টাকা ঋণের মধ্যে খেলাপি ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ৯৮ হাজার ১৬৪ কোটি ৩৪ লাখ টাকা, যা মার্চ শেষে ছিল ৯৪ হাজার ২৬৫ কোটি ১৯ লাখ টাকা। হিসাব অনুযায়ী, তিন মাসে খেলাপি বেড়েছে তিন হাজার ৮৯৯ কোটি ১২ লাখ টাকা।
জুন শেষে খেলাপি ঋণের হার ছিল আট দশমিক ৬১ শতাংশ এবং গত মার্চে এ হার ছিল আট দশমিক ৪৮ শতাংশ। খেলাপির হার বেড়েছে শূন্য দশমিক ১৩ শতাংশ। আর ২০২০ সালের জুনে খেলাপি ঋণের হার ছিল নয় দশমিক ১৬ শতাংশ।
তবে কোনো কোনো ব্যাংক প্রয়োজনের চেয়ে অতিরিক্ত অর্থ নিরাপত্তা সঞ্চিতি হিসাবে রেখে দেওয়ায় সার্বিকভাবে ব্যাংক খাতে ঘাটতির পরিমাণ কিছুটা কমে গেছে। সার্বিকভাবে বাণিজ্যিক ব্যাংকে নিরাপত্তা সঞ্চিতির ঘাটতির পরিমাণ পাঁচ হাজার ৫৮৩ কোটি টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংকের জুন প্রান্তিকের সর্বশেষ প্রতিবেদনে এসব চিত্র উঠে এসেছে।
উল্লেখ্য, সরকারি-বেসরকারিসহ সব ধরনের ব্যাংক যেসব ঋণ বিতরণ করে, তার গুণমান বিবেচনায় নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ নিরাপত্তা সঞ্চিতি (প্রভিশন) হিসেবে জমা রাখতে হয়। কোনো ঋণ শেষ পর্যন্ত মন্দ (খেলাপি) ঋণে পরিণত হলে তাতে ব্যাংক যেন আর্থিকভাবে ঝুঁকিতে না পড়ে, সেজন্য নিরাপত্তা সঞ্চিতি রাখার বিধান রয়েছে।
Posted ৯:০১ অপরাহ্ণ | সোমবার, ২৩ আগস্ট ২০২১
sharebazar24 | sbazaradmin