![sharebazar24](https://sharebazar24.com/wp-content/uploads/2021/06/sharebazar24-logo-3.jpg)
নিজস্ব প্রতিবেদক | মঙ্গলবার, ৩১ আগস্ট ২০২১ | 1172 বার পঠিত | প্রিন্ট
শেয়ার ব্যবসা হলো পৃথিবীতে সবচেয়ে ভালো ব্যবসা। এটা সঠিক পলিসি অনুযায়ী ব্যবসা করা হয়। সবকিছু জেনে বুঝেই এ ব্যবসা করা উচিত। গুজবের ভিত্তিতে এ ব্যবসায় বিনিয়োগ করা উচিত না। এতে পুঁজি ঝুঁকিতে পরার সম্ভাবনা বেশি। বর্তমান দেশের শেয়ারবাজারে গুজবের ভিত্তিতেই বেশি লেনদেন হয়ে থাকে। ২০১০ সালের দেশের শেয়ারবাজারে ধসের পর থেকে কোন পদক্ষেপেই শেয়ারবাজার স্বাভাবিক হয়নি। মাঝে মাঝে সূচক উপরের দিকে ওঠেছে, লেনদেনও বেড়েছে। কিন্তু ঘুরে ফিরে পতনের বৃত্তে ফিরে এসেছে। এতে বিনিয়োগকারীদের মনেও আস্থা সঙ্কট তৈরি হয়েছে।
সূচক বাড়লেও বাজার ভালো মনে করাটা ঠিক না। দেখতে হবে কোন ধরণের শেয়ারের উপরের ভিত্তি করে সূচক ও লেনদেন বাড়ছে। যদি ভালো ও বড় মূলধনী কোম্পানির দরের উপর ভিত্তি করে সূচক ও লেনদেন বেড়েছে তাহলে সেটা স্বাভাবিক বলা যায়। কিন্তু কারণ ছাড়াই দুর্বল ও ঝুঁকিপূর্ণ কোম্পানির লেনদেনের উপর ভিত্তি করে সূচক ও লেনদেন বাড়লে সেটা স্বাভাবিক বলা যায়না। কারণ এ বাজার পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা ১০০% বেশি। তাই বিনিয়োগের আগে কোম্পনিটি সম্পর্কে ভালোভাবে বিনিয়োগ করা উচিত।
২০১০ এর ধসের পর থেকেই বাজার স্বাভাবিক অবস্থায় আসেনি। এর স্বাভাবিক পর্যায়ে আনার জন্য নানা পদক্ষেপ নেয়া হয়েছিল। কিন্তু কোনো পদক্ষেপই কাজে আসেনি। কারণ সেই পদক্ষেপ সেভাবে কার্যকর ছিলনা। সময়োপযোগী পদক্ষেপ ছিলনা। যেসব পদক্ষেপে বাজার ভালো হতে পারে সেগুলো নিচে তুলে ধরা হলো-
বাজার স্থিতিশীলতার প্রথম অন্তরায় হচ্ছে শেয়ার কারসাজি। বাজারে একটি চক্র আছে যার সব সময় দুর্বল ও ঝুঁকিপূর্ণ কোম্পানিগুলো নিয়ে কারসাজির মাধ্যমে নিজেদের ফায়দা হাসিল করে থাকে। তাই এই কারসাজিই আগে বন্ধ করতে হবে। এজন্য নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে সৎ, আন্তরিক ও সাহসী হতে হবে। এর জন্য মান্দাতা আমলের নিয়ম নীতি থেকে বেড়িয়ে আসতে হবে নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে।
কারসাজি বন্ধ করতে হলে দুর্বল ও ঝুঁকিপুর্ণ কোম্পানির শেয়ার লেনদেনের ক্ষেত্রে নতুন নির্দেশনা জারি করতে হবে। যদি কোনো ব্যক্তি দুর্বল, পুঁঞ্জিভুত লোকসান, ধারাবাহিক লোকসানী কোম্পানিতে বিনিয়োগ করতে চায়, তাহলে আগে বড় মূলধনী কোম্পানিতে বিনিয়োগ করতে হবে। যদি দুবল কোম্পানিতে ১০টাকা বিনিয়োগ করতে চায় তবে তার আগে বড় মূলধনী কোম্পানিতে ১০০ টাকা বিনিয়োগ করতে হবে।
শেয়ার দরের সীমা এনএভি অনুযায়ী করতে হবে। যেমন কোনো কোম্পানির এনএভি যদি ১০০ টাকা হয়, তবে সে কোম্পানির শেয়ার দর ২০০ টাকা পর্যন্ত উঠতে পারবে। কিন্ত কমতে পারবে ৫০ টাকা পর্যন্ত। অর্থাৎ এনএভি অনুযায়ী ১০০% বাড়তে পারবে এবং কমবে ৫০% পর্যন্ত। তাহলে দেখা যাবে সম্পদমূল্যের কয়েকগুণ দরে লেনদেন হবেনা।
উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, সাভার রিফ্র্যাক্টরিজের সম্পদমূল্য (এনএভি) ২ টাকা ১৯ পয়সা। অথচ কোম্পানিটির শেয়ার লেনদেন হচ্ছে ২৫৫ টাকা ১০ পয়সা। এনএভি অনুযায়ী দর নির্ধারণ থাকলে কোম্পানিটির সর্বোচ্চ দর হতো ৪ টাকা ৩৮ টাকা। কোম্পানিটি বর্তমানে পুঁঞ্জিভুত লোকসানের পরিমাণ ৫২ লাখ টাকা। এ ধরণের কোম্পানির লেনদেন বন্ধ নির্দেশসহ বিনিয়োগকারীরকে ফেসভ্যালু পরিমাণ টাকা ফেরত দেয়ার নির্দেশসহ এরকম কোম্পানিকে পুঁজিবাজার থেকে তালিকাচ্যুত করতে হবে।
যেসব কোম্পানি পুঁঞ্জিভুত লোকসানে রয়েছে সেগুলোর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। কারণ এসব শেয়ার নিয়েই কারসাজি হয়ে থাকে। তা-না হলে যে কোম্পানি ধারাবাহিক লোকসানে রয়েছে এবং ডিভিডেন্ড দিতে ব্যর্থ হচ্ছে সেগুলোর লেনদেন কেন চালু থাকবে।
কোনো কোম্পানির শেয়ার দর একটানা বাড়লেই স্টক এক্সচেঞ্জের পক্ষ থেকে দায়সারা তদন্ত নোটিশ পাঠানো। এটা না করে সংশ্লিষ্ট বিনিয়োগকারীদেরকেও তদন্ত নোটিশ পাঠাতে হবে। কেন তারা ভালো কোম্পানি রেখে পঁচা কোম্পানির শেয়ারে বিনিয়োগ করছে।
এতদিন ধরে যেসব বিনিয়োগকারী দুর্বল ও ঝুঁকিপুর্ণ এবং লোকসানী কোম্পানিতে বিনিয়োগ করেছে তাদের তথ্য সিডিবিএল থেকে নিয়ে শাস্তিমুলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
কোম্পানিগুলোকে বছরে একবার নয়, দুইবার নিরিক্ষীত আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করতে হবে। এবং অন্তর্বর্তীকালিন ডিভিডেন্ড ঘোষনার নিয়ম করতে হবে। কোম্পানিগুলোর আর্থিক প্রতিবেদন নিরিক্ষা করবে দেশের প্রথম সারির নিরক্ষকরা।
পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোতে সাংবাদিকদের জন্য উন্মুক্ত রাখতে হবে। সাংবাদিকরা কোনো কোম্পানিতে ভিজিটে যেতে চাইলে কোম্পানিগুলো বাঁধা দিতে পারবেনা। তাকে সে ব্যপারে যথাযথ সহযোগিতা করতে হবে। যাতে সে কোম্পানির সঠিক অবস্থা জানতে পারে।
ওটিসি বিলুপ্ত করে বাইব্যাক আইন চালু করতে হবে। কারণ ওটিসিতে যাওয়া মানে কোম্পানি লাভবান এবং বিনিয়োগকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া।
শেয়ারবাজারে বিনিয়োগকারীদের কিছু সংগঠনের নেতার কোম্পানিগুলোতে চাঁদাবাজি করে থাকে। এগুলো বন্ধ করতে হবে। কোনো সংগঠনের নেতার বিভিন্ন দাবি দাওয়ার নামে চাঁদাবাজি করে থাকে এতে তারা লাভবান হলেও সাধারণ বিনিয়োগকারীরা কিছুই পায়না।
যে কোনো কোম্পানির আইপিও অনুমোদনের আগে ভালোভাবে যাচাই বাছাই করতে হবে। যে কোনো আইপিও আবেদনের ক্ষেত্রে নিয়ম করতে হবে। কোম্পানিটি যদি তালিকাভুক্তির পর টানা ৫ বছরের মধ্যে ডিভিডেন্ড দিতে ব্যর্থ হলে ফেসভ্যালুর দ্বিগুন টাকা ফেরত দিতে হবে। এছাড়া বীমা খাতের কোম্পানিগুলোর আইপিও অনুমোদন স্থগিত রাখতে হবে। এছাড়া এসএমই প্লাটফর্মের কোম্পানিগুলোর টাকা উত্তোলন বন্ধ রাখতে হবে।
লিভার ব্রাদার্স, নোকিয়া এবং স্যামসঙ্গের মতো কোম্পানিগুলোকে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত করতে বিশেষ ব্যবস্থা নিতে হবে।
এজিএম পার্টির দৌরাত্ম্য বন্ধে ইলেক্ট্রনিক্স ভোটিং পদ্ধতি চালু করতে হবে। যা লাইভ দেখানো হবে। ভোট দেয়ার সাথে সাথে তার পক্ষে বিপক্ষের পরিমাণ সরাসরি বিনিয়োগকারীরা দেখতে পারে সে ব্যবস্থা করতে হবে। প্রত্যেক বিনিয়োগকারী নিজেদের মোবাইল থেকে ভোট দিতে পারবে এমন পদ্ধতি চালু করতে হবে। একদিনে ৩টির বেশি এজিএম করার অনুমোদন করা যাবেনা এবং সব কোম্পানির এজিএম ঢাকায় করতে হবে।
কোম্পানিগুলোর আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী কি কারণে মুনাফা বেড়েছে বা কমেছে তা জানাতে হবে এবং আর্থিক প্রতিবেদন বাংলা এব ইংরেজি দুই ভার্সনে করতে হবে।
কোম্পানিগুলো কোনো অবস্থায় ৫ শতাংশের কম ডিভিডেন্ড দিতে পারবেনা। ‘এ’ ক্যাটাগরিতে আসতে হলে কোম্পানিগুলোকে ১৫ শতাংশ ডিভিডেন্ড দিতে হবে। ১০ শতাংশ থেকে ১৪ শতাংশ পর্যন্ত কোম্পানিটিকে ‘বি’ ক্যাটাগরি হিসেবে ধরা হবে। এবং ৫ থেকে ৯ শতাংশ পর্যন্ত ‘জেড’ ক্যাটাগরি হিসেবে বিবেচিত হবে। স্টক ডিভিডেন্ডের পাশাপাশি কোম্পানিগুলোকে ক্যাশ ডিভিডেন্ড দিতে হবে।
পরিশেষে বলা যায় যে, নিয়ন্ত্রক সংস্থা চাইলে এসব বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারে। কারসাজি বন্ধ করা করা কোনো ব্যাপার না তাদের কাছে। শুধু সততা ও আন্তরিকতা দরকার। সিডিবিএলে সব তথ্য তো সংরক্ষিত থাকে। সেখান থেকেই তো পাওয়া যেতে পারে কোন শেয়ারে নিয়ে কারা কারসাজি করছে। কিন্তু আজ পর্যন্ত সেভাবে কেউ কোনো পদক্ষেপ না নেয়ায় বাজার স্বাভাবিক অবস্থায় আসেনি।
শেয়ারবাজার২৪
Posted ১:০০ পূর্বাহ্ণ | মঙ্গলবার, ৩১ আগস্ট ২০২১
sharebazar24 | sbazaradmin
.
.